চালের দাম বেড়েছে

চালের দাম বেড়েছে

ওনেরসেরনমসনমম.

ঈদের পর রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চালের দাম বেড়েছে। মানভেদে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বন্যার কারণে চালের এই দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

অবশ্য মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকেই দেশের বাজারে চালের দামে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত ৫ মাসের চালের দাম অন্তত ৮ বার উঠা-নামা করেছে। চাহিদা বাড়লেই চালের দাম বেড়ে যাওয়া এবং চাহিদা কমলে দাম কমে যাওয়ার এ চিত্র দেখা যাচ্ছে গত মার্চ থেকেই।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে টানা ৬৬ দিন বন্ধের পর গত ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়। তবে এরপর প্রতিদিন করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এলাকা ধরে জোনভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বুধবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকার মধ্যে।

চিকন চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে মাঝারি ও মোটা চালের। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। আর মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, যা আগে ছিল ৩৬ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।

খিলগাঁও তালতলার চাল ব্যবসায়ী জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, বন্যার কারণে এখন সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। আগে রশিদের মিনিকেট ২৫ কেজির বস্তা ছিল ১৩২০ টাকা। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৭০ টাকা।

তিনি বলেন, শুধু রশিদের মিনিকেট না, ঈদের পর সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এখন বাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো চাল নেই। মোটা চাল তো পাওয়ায় যাচ্ছে না। আর লতা, আটাশ চালের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। ঈদের আগে এই চাল ৪৪ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি।

গত পাঁচ মাসে চালের দাম বাড়া কমার চিত্রও তুলে ধরেন এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই চাল বিক্রি বেড়ে যায়, এতে দামও বাড়ে। এরপর বিক্রি কমলে মাঝে দাম কিছুটা কমে। তবে রোজার আগে আবার চালের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে যায়। নতুন চাল আসায় রোজার ঈদের পর আবার দাম কমে।

জানে আলম বলেন, ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল লকডাউন হচ্ছে– এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে জুন মাসে আবার চালের দাম বাড়ে। কিছুদিন বাড়তি দামে চাল বিক্রির পর জুলাই মাসে আবার দাম কমে, যা ঈদের আগে পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকে। তবে এখন আবার চালের দাম বেড়েছে। এই দাম কতদিন স্থিতিশীল থাকবে বলা যাচ্ছে না। যেকোনো সময় চালের দাম বাড়ছেই পারে, আবার কমতেও পারে।

মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, ঈদের আগে রশিদের ২৫ কেজির মিনিকেট বিক্রি করেছি ১৩০০ টাকা। রোববার নতুন চাল এনেছি, ২৫ কেজির প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। ফলে এখন ১৩৫০ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই।

তিনি বলেন, মিনিকেট, নাজির, আটাশ, লতা সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ৪৪ টাকা কেজি লতা চালের দাম বেড়ে ৪৮ টাকা হয়েছে। আগে ৫২ টাকা কেজিতেও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয়েছে, এখন ৫৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে সামনে দাম আরও বাড়বে।

রামপুরার ব্যবসায়ী মন্টু বলেন, হুট করে এভাবে চালের দাম বেড়ে যাবে আগে বুঝতে পারিনি। ঈদের পর হঠাৎ করেই বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণেই চালের দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।

খিলগাঁও থেকে চাল কেনেন আলেয়া বেগম। তিনি বলেন, ঈদের আগে যে চাল ৫২ টাকা কেজি কিনেছি, এখন সেই চালের কেজি ৫৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন বন্যার কারণে চালের দাম বেড়েছে। কিন্তু বন্যা তো অনেক আগেই হয়েছে। তাছাড়া বন্যায় এবার ধানের ক্ষতি হয়েছে, এমন সংবাদ শুননি। আসলে বাজারে এখন কোনো তদারকি নেই। সে কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে। চালের বাজারে অভিযান চললে দেখবেন এমনিই দাম কমে যাবে।

রামপুরার বাসিন্দা মামুন বলেন, বন্যার কারণে অনেক দিন ধরেই সবজির দাম চড়া। বাজারে এখন কোনো সবজি ৫০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে চালের দাম নতুন করে বাড়ল। একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না, উল্টো কমছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের পক্ষে টিকে থাকায় কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Rayhan